
পুলিশের মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী মৃত্যুশয্যায়


শরিয়তপুর থেকে নুরুজ্জামান শেখ
শরীয়তপুর ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর সাব-ইন্সপেক্টর মো. হুমায়ুন কবির মামলার সাক্ষীগণের সঠিক জবানবন্দি ও সরেজমিনে তদন্ত না করেই আদালতে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কারণে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী তুলি ফার্নিচারের কর্ণধার, তুলাশার ইউনিয়নের বিএনপি’র সভাপতি মো. হাকিম মাদবর মৃত্যুশয্যায়। এসআই হুমায়ুন কবিরের অসাধু কর্মকাণ্ডের কারণে তুলাশার ইউনিয়নের জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই সাথে তদন্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিচারের দাবি জানাচ্ছে। মিথ্যা মামলায় ভুক্তভোগী হাকিম মাদবরের স্ত্রী তাসলিমা বেগম গণমাধ্যমকে জানান, সিআইডি কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য চাওয়া মোটা অংকের ঘুষ দাবি পূরণ না করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সরেজমিনে সঠিকভাবে তদন্ত না করেই আমার স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালতে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কারণেই আমার স্বামী সাত দিন জেল খেটেছেন এবং গত বৃহস্পতিবার আদালতে আমার স্বামীর জামিন নামঞ্জুর করার কারণে আদালতের ভিতরেই ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। মামলার বাদী মনোয়ারা বেগম আমার স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য ২০২২ সালের ঘটনা উল্লেখ করে ২০২৪ সালে আদালতে মিথ্যা মামলা করেন। সি আর মামলা নং-৪২৪/২০২৪। বাদী মনোয়ারা বেগম আমার স্বামীর কাছ থেকে টাকা পাবে এমন কোনো উপযুক্ত প্রমাণ সঠিক কাগজপত্র আদালতে দাখিল করতে পারেন নাই। মামলার ১ নং সাক্ষী শাকিল গণমাধ্যমকে বলেন, পালং বাজারে আমার দোকান থেকে আন্টি মনোয়ারা বেগম সকল সদাইপাতি আমার কাছ থেকে নেয়। সেই সুবাদে আমি তাকে আন্টি বলি এবং সে আমাকে ছেলে হিসেবে ভাবে। আন্টি আমাকে একদিন বলে বাবা আমি এক লোকের কাছ থেকে টাকা পাবো তুমি যদি আমার কথামতো সাক্ষী দাও তাহলে আমি ওই টাকাটা পাব। আন্টি আমাকে অনেক অনুরোধ করার পর সাক্ষী দেওয়ার জন্য আমাকে মাদারীপুর র?্যাব অফিসে এবং সদর এমপির অফিসে নিয়ে যায়। মামলার বিবাদী হাকিম মাদবরকে আগে চিনতাম না এখন চিনি। আন্টি এবং হাকিম মাদবরের সাথে টাকা-পয়সা লেনদেনের বিষয়টি আমি কখনোই জানতাম না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সাক্ষী হিসেবে কি কি বলতে হবে তা আন্টি আমাকে আগেই শিখিয়ে দিয়েছে। একদিন আন্টি আমাকে সাথে নিয়ে সিআইডি অফিসে যায় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হুমায়ুন কবির স্যার কাগজে সাইন করতে বলে তখন আমি আন্টির কথামতো সাইন দেই। পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদনে দেখতে পাই আন্টি আমাকে যা যা শিখিয়ে দিয়েছে হুবহু তদন্ত স্যার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। আন্টি আমাকে বলেন, তোমার হাতের মোবাইলটা কম দামি টাকাটা উঠাইতে পারলে আমার মেয়ে বলছে তোমাকে একটা রঢ়যড়হব কিনে দিবে। আমি না বুঝে আন্টির কথামতো আইফোনের লোভে আমি মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছি। তাদের মধ্যে টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয়টি আমি কিছুই জানিনা। যেখানে যাওয়া লাগে সেখানে গিয়েই আমি সত্য কথা বলব।
মামলার বাদী মনোয়ারা বেগমের বিশ্বস্ত সাক্ষীগণ খাজা ফার্নিচারের মালিক রুবেল, ভাড়াটিয়া প্রতিবেশী ফারজানা বেগম এবং সালমা ওরফে পুতুল গণমাধ্যমকে বলেন, মনোয়ারা বেগমের স্বামী আমাদেরকে একে একে কল দিয়ে বলেন বটতলার ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসায় একটু আসেন এবং সাথে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে। মাদ্রাসায় গিয়ে দেখি তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির স্যার, মনোয়ারা বেগম এবং তার স্বামী একটা রুমে বসা। সিআইডির তদন্ত হুমায়ুন কবির স্যার আমাদের নাম ঠিকানা জানল, প্রত্যেকের আইডি কার্ড নিল এবং একটি কাগজে সাইন দিতে বলল। তদন্ত স্যার সাক্ষী হিসেবে আমাদেরকে কিছুই বলেন নাই। রুবেল খলিফা বলেন, হুমায়ুন কবির স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করেন মনোয়ারা বেগম আপনার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকার ফার্নিচার কিনছেন আমি বলছি হ্যাঁ, ব্যাচ এতটুকুই। আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে দেখতে পাই টাকা পয়সা লেনদেনের বিষয় যা যা উল্লেখ করেছে এ বিষয়ে আমরা কিছুই বলি নাই কিছুই জানিনা। আমরা হাকিম মাদবরকে ভালো করে চিনিও না।সাক্ষীগণরা আরো বলেন, সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির স্যার, মনোয়ারা বেগম এবং তার স্বামী আমাদের সাথে সম্পূর্ণ প্রতারণা করেছে।
বাদী মনোয়ারা বেগমের স্বামী গণমাধ্যমকে বলেন, মামলা বিচারাধীন আছে এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। বাদীর আইনজীবী এডভোকেট ইসতিয়াক আহমেদ সৈকত গণমাধ্যমকে বলেন, সিআইডি ফরেনসিক ল্যাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিবাদী হাকিম মাদবর ৫ লাখ টাকা নেয়া মেসেজগুলো যাছাই-বাছাই হয়ে এসেছে। সত্যতা পাওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদনে আসামি হাকিম মাদবরের বিরুদ্ধে ৪০৬, ৪২০ ধারার অভিযোগের সত্যতার প্রতিবেদন দিয়েছেন তদন্তকর্মকর্তা। আসামি হাকিম মাদবর মোবাইল লকের পাসওয়ার্ড পুলিশকে না দেওয়ায় আসামি হাকিম মাদবরের জব্দকৃত মোবাইল পুনঃনিরিক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে আদালতে দরখাস্ত করেছি।
আইনজীবী বিশ্বাস রেখে বলেন, প্রকৃতপক্ষে আসামির জব্দকৃত মোবাইল অনুসন্ধান করলে অনেক তথ্য প্রমাণ পাওযা যাবে। মামার ১ নং সাক্ষী শাকিল ও বাদী মনোয়ারা বেগমের সাথে মোবাইলে কথা বলার সময় বাদী শাকিলকে বলেন, কিসের উপর সই দিতে বলছে হেইডা পড় নাই। আন্টি আমি তো মিথ্যা সাক্ষী দিছি, জেনুইন মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছি। আমি আদালতে গিয়ে যদি বলি আমি মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছি তাহলে তো আরো বিপদে পড়ুম। আন্টি আমি মূলত মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছি। কথা ঘুরিয়ে বললেও বিপদে পড়ুম।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ